VATax

মূসক আইনের ধারা ৪৬: উপকরণ কর রেয়াত।

মূসক আইনের ধারা ৪৬: উপকরণ কর রেয়াত।

(১) এই আইনে ভিন্নরূপ কোন বিধান না থাকিলে, কোন নিবন্ধিত ব্যক্তি অর্থনৈতিক কার্যক্রম প্রক্রিয়ায় করযোগ্য সরবরাহের উপর উৎপাদ করের বিপরীতে, নিম্নবর্ণিত ক্ষেত্র ব্যতীত, পরিশোধিত উপকরণ কর রেয়াত গ্রহণ করিতে পারিবেন, যথা:-
[রেয়াত প্রাপ্তির ক্ষেত্রে নিবন্ধিত ব্যক্তিকে অর্থনৈতিক কার্যক্রমের আওতায় করযোগ্য সরবরাহ করতে হবে এবং উৎপাদ কর পরিশোধ করতে হবে। তবেই কেবল পরিশোধিত উপকরণ কর রেয়াত পাওয়া যাবে।]
(ক) একই মালিকানাধীন নিবন্ধিত সরবরাহকারী বা সরবরাহগ্রহীতার মধ্যে উপকরণ ক্রয় বিক্রয়ের ক্ষেত্র ব্যতীত যদি করযোগ্য সরবরাহের মূল্য ১ (এক) লক্ষ টাকা অতিক্রম করে এবং উক্ত সরবরাহের সমুদয় পণ ব্যাংকিং মাধ্যম বা মোবাইল ব্যাংকিং মাধ্যম ব্যতিরেকে পরিশোধ করা হয়।]

[আইনে ‘একই মালিকানাধীন’ এর কোন সংজ্ঞা নেই। একাধিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্যদের অংশীদার একই হলে অংশীদারি কারবার আইন ১৯৩২ এর ধারা ৪ অনুযায়ী লভ্যাংশ আনুপাতিক হারে শেয়ার করায় ঐ প্রতিষ্ঠানগুলোকে ‘একই মালিকানাধীন’ প্রতিষ্ঠান বিবেচনার সুযোগ রয়েছে। কেন্দ্রীয় নিবন্ধনের ক্ষেত্রে উপকরণ ক্রয়-বিক্রয়ের সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে, মূসক-৬.৫ দিয়ে উপকরণ স্থানান্তর করা হয়। ফলে পণ পরিশোধ না হওয়ায় রেয়াতের ক্ষেত্র সৃষ্টি হয় না। ইউনিট নিবন্ধনের ক্ষেত্রে একই মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে উপকরণ ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে সরবরাহ মূল্য (মূসক ব্যতীত মূল্য) এক লাখ টাকা অতিক্রম করলেও ব্যাংকিং চ্যানেলে পণ (মূসকসহ মূল্য) পরিশোধ ব্যতীত রেয়াত গ্রহণ করা যাবে।তবে বিধি ২৯ এর উপ-বিধি (৪) অনুযায়ী এক্ষেত্রে কমিশনারের অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে।
সরবরাহের মূল্য (মূসক ব্যতীত মূল্য) এক লক্ষ টাকা অতিক্রম করলে নিবন্ধিত করদাতা ফরম মূসক-২.১ এ যেসব ব্যাংক একাউন্ট নম্বর উল্লেখ করেছেন সেসব ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে পরিশোধ পদ্ধতিকে ব্যাংকিং মাধ্যম বলা হয়েছে এবং বিকাশ, রকেট, নগদ ইত্যাদি প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সরবরাহ মূল্য পরিশোধকে মোবাইল ব্যাংকিং মাধ্যম বুঝানো হয়েছে। যদি কোন করদাতার করযোগ্য সরবরাহের মূল্য (ধারা-৩২ অনুযায়ী সরবরাহ মূল্য হচ্ছে মূসক ব্যতীত মূল্য) ১ (এক) লক্ষ টাকা অতিক্রম করে এবং ঐ করদাতা সরবরাহ মূল্যের আংশিক ব্যাংকিং মাধ্যমে এবং আংশিক ব্যাংকিং মাধ্যম ব্যতীত প্রদান করে (যেমনঃ ১৫% মূসক প্রযোজ্য বিবেচনা করে সরবররাহ মূল্য ১,০৪,৩৪৬.৮৩ টাকা হলে ঐ সরবরাহের পণ অর্থাৎ মূসকসহ মূল্য ১,২০,০০০ টাকা হলে ১,০০,০০০ টাকা ব্যাংকিং চ্যানেলে এবং ২০,০০০ ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যতীত প্রদান করে) তবে ১,২০,০০০ টাকার উপর পরিশোধিত সমুদয় রেয়াত বাতিলযোগ্য হবে। কেননা, আইনে সুস্পষ্টভাবে ‘সমুদয় পণ’ ব্যাংকিং মাধ্যমে পরিশোধের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। সুতরাং, আংশিক সরবরাহ মূল্য বা পণ ব্যাংকিং মাধ্যমে পরিশোধ করা হলে আংশিক কর রেয়াত অনুমোদন করার সুযোগ নেই।

সম্পূরক শুল্ক প্রযোজ্য থাকলে সম্পূরক শুল্ক ও মূসকসহ সমুদয় মূল্য ব্যাংকিং চ্যানেলে পরিশোধ না করলে রেয়াত প্রাপ্য হবে না। যেমনঃ যদি ৫% সম্পূরক শুল্ক ও ১৫% মূসক প্রযোজ্য থাকে এবং সরবরাহ মূল্য ১,০১,০০০ টাকা হয় তবে পণ (মূসক ও সম্পূরক শুল্কসহ) হবে ১,২০,৯৫৭.৫০ টাকা, যার পুরোটাই ব্যাংকিং চ্যানেলে পরিশোধ করতে হবে।)

(খ)যদি আমদানিকৃত সেবার সরবরাহ গ্রহণের ক্ষেত্রে সেবা গ্রহীতা কর্তৃক দাখিলপত্রে উক্ত সেবার বিপরীতে প্রদেয় উৎপাদ কর ধারা ২০ অনুসারে পৃথকভাবে প্রদর্শন না করা হয়:

[নিবন্ধিত করদাতা স্বাভাবিক পণ্য বা সেবা সরবরাহের পাশাপাশি অনাবাসিক ব্যক্তির নিকট হতে আমদানিকৃত সেবাও ভোগ করতে পারেন। কিন্তু আমদানিকৃত সেবার হিসাব পদ্ধতি ভিন্ন হওয়ায় সেবামূল্য দাখিলপত্রের প্রদেয় এর হিসেবে প্রদর্শনের শর্তে রেয়াত প্রাপ্য হন। দাখিলপত্রের প্রদেয় এর ঘরে যে মূসক প্রদর্শিত হয় তার সমপরিমাণ মূসক রেয়াতের হিসাব থেকে বিয়োজিত হয়। তাই দাখিলপত্রের প্রদেয় অংশে পৃথকভাবে প্রদর্শন করার শর্ত আরোপ করা হয়েছে। এটি মূলত হিসাব সংরক্ষণের একটি পদ্ধতি।]

(গ)যেই কর মেয়াদে চালানপত্র বা বিল অব এন্ট্রির মাধ্যমে উপকরণ ক্রয় বা সংগ্রহ করা হয় সেই কর মেয়াদে বা তৎপরবর্তী চারটি কর মেয়াদের মধ্যে যদি উপকরণ কর রেয়াত গ্রহণ না করে:

(ঘ) প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, চুক্তিভিত্তিতে পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্র ব্যতীত, অন্যের অধিকারে, দখলে বা তত্ত্বাবধানে রক্ষিত পণ্য বা সেবার বিপরীতে পরিশোধিত মূল্য সংযোজন কর:।
(কোন উৎপাদক চুক্তির আওতায় তার নিজস্ব উপকরণ কোন চুক্তিকারীর নিকট সরবরাহ করলে এবং চুক্তিকারী ঐ উপকরণ দিয়ে পণ্য উৎপাদন করে সরবরাহ করলে উৎপাদক নিজস্ব উপকরণের উপর পরিশোধিত মূসক রেয়াত প্রাপ্য হবেন। আবার চুক্তিকারী নিজের উপকরণ দিয়ে উৎপাদন করলে চুক্তিকারী পরিশোধিত মূসক রেয়াত পাবেন। অর্থাৎ যিনি উপকরণের উপর মূসক পরিশোধ করেছেন রেয়াত তিনিই পাবেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, যদি ‘ক’ কোন পণ্য উৎপাদনের জন্য ‘খ’ এর সাথে চুক্তি করে। তাহলে, ‘খ’ যদি তার নিজস্ব উপকরণ ব্যবহার করে পণ্য উৎপাদনপূর্বক ‘ক’ কে উপকরণ মূল্য ও চুক্তিমূল্য সহযোগে কর চালানপত্র প্রদান করে সরবরাহ করে তাহলে ‘খ’ তার উপকরণের উপর পরিশোষিত মুসক রেয়াত পাবেন। আর যদি ‘ক’ উপকরণ সরবরাহ করে এবং ‘খ’ যদি প্রাপ্ত উপকরণ দিয়ে পণ্য উৎপাদন করে ‘ক’ কে চুক্তিমূল্যে কর চালানপত্র দিয়ে সরবরাহ করে তাহলে ‘ক’ পরিশোধিত মূসক রেয়াত পাবে।
করদাতার নিবন্ধিত প্রাঙ্গন ব্যতীত অন্যকোন ব্যক্তির নিকট বা ব্যক্তির জিম্মায় বা গুদামে বা ব্যাংক লোনের মাধ্যমে আমদানির ক্ষেত্রে ব্যাংকের জিম্মায় বা অন্যান্য ক্ষেত্রে পোর্টে (ছাড়ের অপেক্ষায় থাকে এমন) থাকে, তবে চালান বা বিল অফ এন্ট্রি করদাতার নিকট থাকলেও তা দিয়ে রেয়াত গ্রহণ বৈধ হবে না। পণ্য নিবন্ধিত প্রাঙ্গনে ঢুকার পর ক্রয় হিসাব পুস্তকে বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ক্রয়-বিক্রয় হিসাব পুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করে পাঁচ করমেয়াদের মধ্যে রেয়াত গ্রহণ করা যাবে। আমদানিকৃত বা ক্রয়কৃত পণ্য অন্য কোন ব্যক্তির গুদামে সংরক্ষণ করা হলে গুদাম থেকে নিজস্ব প্রাঙ্গনে প্রবেশের পর সেখান থেকে ইস্যুকৃত মূসক চালানের বিপরীতে রেয়াত গ্রহণ করতে হবে।)

(ঙ)যদি কোন পণ্য বা সেবা বিধি দ্বারা নির্ধারিত ক্রয় হিসাব পুস্তকে বা ক্রয়-বিক্রয় হিসাব পুস্তকে। অন্তর্ভুক্ত না করা হয়;
(পণ্য বা সেবা প্রক্রিয়াকরণ করেন এমন নিবন্ধিত করদাতাকে ক্রয় হিসাব পুস্তকে বা ব্যবসায়ী বা বাণিজ্যিক আমদানিকারককে ক্রয়-বিক্রয় হিসাব পুস্তকে কত সময়ের মধ্যে উপকরণ এন্ট্রি দিতে হবে তা আইন বা বিধিতে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ নেই। তবে দৃশ্যমান উপকরণ আমদানি করে ছাড় গ্রহণপূর্বক বা স্থানীয় পণ্য ক্রয় করে সরবরাহ গ্রহণপূর্বক প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গনে প্রবেশ করলেই তা এন্ট্রি দিতে হবে। সেবার ক্ষেত্রে মূসক-৬.৩ প্রাপ্তির সাথে সাথেই ক্রয় হিসাব পুস্তক বা ক্রয়-বিক্রয় হিসাব পুস্তকে এন্ট্রি দিতে হবে।)

(চ) যদি কর চালানপত্রে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের নাম, ঠিকানা ও নিবন্ধন নম্বর উল্লেখ না থাকে:
(চালানপত্রে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের নাম, ঠিকানা ও নিবন্ধন নম্বর উল্লেখ থাকতে হবে। যেকোন একটি উল্লেখ না থাকলেও রেয়াত প্রাপ্য হবে না।)

(ছ) আমদানিকারকের নিকট হইতে সরবরাহ গ্রহণের ক্ষেত্রে আমদানিকারক কর্তৃক ইস্যুকৃত কর চালানপত্রে আমদানি চালান সংশ্লিষ্ট বিল অব এন্ট্রি নম্বর উল্লেখ না থাকিলে এবং কর চালান পত্রে বর্ণিত পণ্যের বর্ণনার সহিত আমদানি বিল অব এন্ট্রিতে বর্ণিত পণ্যের বর্ণনার আলোকে যথাযথ বাণিজ্যিক বর্ণনার মিল না থাকিলে];
[বাণিজ্যিক আমদানিকারকের কাছ থেকে কোন সরবরাহ গ্রহণ করা হলে ইস্যুকৃত মূসক-৬.৩ তে আমদানি বিল অফ এন্ট্রির নম্বর ও বিল অফ এন্ট্রিতে উল্লিখিত পণ্যের বাণিজ্যিক বর্ণনা, চালানপত্রে উল্লিখিত বর্ণনার সাথে মিল থাকতে হবে। অন্যথায়, রেয়াত প্রাপ্য হবে না।)

(জ) ব্যাংক গ্যারান্টির মাধ্যমে খালাসকৃত উপকরণ বা পণ্যের ক্ষেত্রে, যে কারণে উক্তরূপ ব্যাংক গ্যারান্টি গ্রহণ করা হইয়াছে তাহা চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি না হইলে, উক্ত ব্যাংক গ্যারান্টি অংশের সহিত সংশ্লিষ্ট উপকরণ কর;
(ব্যাংক গ্যারান্টির মাধ্যমে উপকরণ বা পণ্য ছাড় করা হলে তা সাময়িক শুল্কায়ন করা হয়। পরে চূড়ান্ত শুল্কায়ন করা হয়। এক্ষেত্রে, সাময়িক শুল্কায়িত বিল অফ এন্ট্রি দিয়ে রেয়াত গ্রহণ করা যাবে না। চূড়ান্ত শুল্কায়নের পর ব্যাংক গ্যারান্টি সংশ্লিষ্ট অংশও বিল অফ এন্ট্রিতে প্রতিফলিত হবে। তখন প্রকৃত পরিশোধিত উপকরণ কর রেয়াত গ্রহণ করা যাবে। কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যাংক গ্যারান্টি নিষ্পত্তিতে পাঁচ করমেয়াদের বেশী সময় লেগে যেতে পারে। তাই বর্তমানে পাঁচ করমেয়াদের পরেও নিষ্পত্তিকৃত বিল অফ এন্ট্রির ক্ষেত্রে রেয়াত গ্রহণের সুযোগ রেখে অনলাইনে রিটার্ন দাখিল পদ্ধতি সংশোধন করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে, ব্যাংক গ্যারান্টি যে করমেয়াদে নিষ্পত্তি হয় ঐ করমেয়াদ বা পরবর্তী চার করমেয়াদের মধ্যে রেয়াত গ্রহণ করা যাবে।)

(ঝ) অব্যাহতিপ্রাপ্ত পণ্য উৎপাদনে বা সেবা প্রদানে ব্যবহৃত পণ্য বা সেবার উপর পরিশোধিত উপকরণ কর;
(অব্যাহতিপ্রাপ্ত পণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত উপকরণের উপর মূসক পরিশোধ করলেও তা রেয়াতযোগ্য হবে না। কারন এক্ষেত্রে উৎপাদ কর নেই। তবে মূসক পরিশোধিত উপকরণ দিয়ে মূসকযোগ্য ও অব্যাহতিপ্রাপ্ত উভয় ধরনের পণ্য উৎপাদন করলে শুধুমাত্র মূসকযোগ্য পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত উপকরণের উপর পরিশোধিত মূসক রেয়াত পাওয়া যাবে।)

(ঞ) টার্নওভার করের আওতায় পরিশোধিত টার্নওভার কর;
(ধারা ৪৬ এর উপ-ধারা (১) তে বলা হয়েছে ‘পরিশোধিত উপকরণ কর রেয়াত গ্রহন’ করা যাবে। ধারা ২ এর দফা (১৯) তে ‘উপকরণ কর’ এর সংজ্ঞা দেয়া আছে। সেখানে আমদানি ও স্থানীয় পর্যায়ে পরিশোধিত মূসককেই কেবল উপকরণ কর হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। ফলে স্থানীয় পর্যায়ে টার্নওভার কর পরিশোধিত উপকরণ, নিবন্ধিত বা তালিকাভুক্ত উভয় করদাতার জন্যই রেয়াতযোগ্য নয়। একইভাবে ধারা ৬৩ এর উপ-ধারা (৪) অনুযায়ী তালিকাভুক্ত ব্যক্তি কর্তৃক ক্রয়কৃত বা সংগৃহীত উপকরণের বিপরীতে পরিশোধিত মূসক বা টার্নওভার কর রেয়াত বা হ্রাসকারী সমন্বয়যোগ্য নয়।)

(ট) পণ্য উৎপাদনে বা সেবা প্রদানে ব্যবহৃত পণ্য বা সেবার উপর পরিশোধিত সম্পূরক শুল্ক: (সম্পূরক শুল্ক রেয়াতযোগ্য নয়। অত্যাবশ্যকীয় নয় এমন পণ্য বা সেবার উপর সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয় ঐ পণ্য বা সেবার ভোগ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। কিন্তু রেয়াত প্রদান করা হলে সে উদ্দেশ্য পূরণ হয় না। তাই উপকরণ হিসেবে পরিশোধিত সম্পূরক শুল্কের রেয়াত বারিত করা হয়েছে।)

(ঠ) রপ্তানির ক্ষেত্র ব্যতীত মূসকের হার ১৫ শতাংশের। নিম্নে কিংবা সুনির্দিষ্ট কর আরোপিত রহিয়াছে এমন নির্দিষ্টকৃত কোন পণ্য বা সেবা সরবরাহের ক্ষেত্রে ক্রীত উপকরণের উপর পরিশোধিত মূল্য সংযোজন কর:
(রপ্তানি পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত উপকরণের উপর পরিশোধিত মূসক, ১৫ শতাংশ বা হ্রাসকৃত হার বা সুনির্দিষ্ট কর যা-ই হোক না কেন রপ্তানিকারক তা রেয়াত নিতে পারবেন। স্থানীয় সরবরাহের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ১৫ শতাংশ হারে মূসক পরিশোধকারী করদাতা তার পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত উপকরণের উপর পরিশোধিত ১৫ শতাংশ, হ্রাসকৃত হার বা সুনির্দিষ্ট কর পরিশোধ করলে তা রেয়াত পাবেন। উৎপাদ করহার ১৫ শতাংশ না হলে উপকরণের উপর ১৫ শতাংশ হারে মূসক পরিশোধ করলেও তার উপর রেয়াত প্রাপ্য হবে না।)

(ড) উপকরণ-উৎপাদ সহগ (Input-Output Coefficient) এ ঘোষিত নেই এমন উপকরণ বা পণ্যের বিপরীতে পরিশোধিত উপকরণ কর ।
(কোন পণ্যের বিপরীতে রেয়াত গ্রহণ করতে হলে উপকরণ-উৎপাদ সহগে তা রেয়াত নেয়ার পূর্বেই ঘোষিত থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে ঘোষিত সহগে উল্লিখিত পরিমাণের উপরই রেয়াত প্রাপ্য হবেন। রেয়াত গ্রহণের পূর্বে সহগ ঘোষণা প্রদান করা না হলে বা রেয়াতযোগ্য পণ্য কোন সহগে ঘোষিত না থাকলে করদাতা ঐ পণ্যের রেয়াত প্রাপ্য হবেন না। সহগে অপচয়সহ ঘোষিত মূল্যের উপরই রেয়াত গ্রহণ করা যাবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রজ্ঞাপন এসআরও নং-১১৭-আইন/২০২০/১০০-মূসক তারিখঃ ১৪ মে, ২০২০ খ্রিষ্টাব্দ এর মাধ্যমে নতুন একটি উপকরণ-উৎপাদ সহগ (মূসক-৪.৩) ফরম জারি করা হয়েছে। সেখানে সেবার ক্ষেত্রে উপকরণ-উৎপাদ সহগ (মূসক-৪.৩) ঘোষণার বাধ্যবাধকতা রহিত করা হয়েছে। ১৪ অক্টোবর, ২০২০ খ্রিষ্টাব্দ তারিখে জারিকৃত ব্যাখ্যা পত্র নং-০৮/মূসক/২০২০ এর মাধ্যমে সেবা সরবরাহের ক্ষেত্রে উপকরণ-উৎপাদ সহগ (মূসক-৪.৩) ঘোষণার প্রয়োজন নেই মর্মে স্পষ্টীকরণ করা হয়েছে। ফলে সেবার ক্ষেত্রে সহগ ঘোষণা ব্যতীত রেয়াত প্রাপ্য হবে। যদিও ব্যাখ্যা পত্রে সেবার ক্ষেত্রে সহগ ঘোষণা ব্যতীত রেয়াত প্রাপ্তির বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু আইনের ধারা-৪৬ এর (১) এর (ড) তে সকল উপকরণ বা পণ্য, যা সহগে উল্লেখ নেই তার রেয়াত বারিত করা হয়েছে। আবার আইনের ধারা-৪৬ এর উপ-ধারা (১) তে “অর্থনৈতিক কার্যক্রম প্রক্রিয়ায় করযোগ্য সরবরাহের” বিষয় উল্লেখ রয়েছে। ফলে সেবা যেহেতু অর্থনৈতিক কার্যক্রম প্রক্রিয়ায় করযোগ্য সরবরাহ এবং সেবার ক্ষেত্রেও উপকরণ থাকে সেহেতু সেবা সরবরাহের বিপরীতে সহগ ঘোষণা ব্যতীত রেয়াত গ্রহণের ক্ষেত্রে আইনী সংশয় সৃষ্টির ক্ষেত্র এখনও বিদ্যমান।)

(ঢ) মোট উপকরণ মূল্য ৭.৫ (সাত দশমিক পাঁচ) শতাংশের অধিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে নূতন উপকরণ-উৎপাদ সহগ প্রদান না করিলে অতিরিক্ত বর্ধিত উপকরণ কর।
(এই উপধারাটি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় ‘মোট উপকরণ মূল্য ৭.৫% এর অধিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে’ এ কথাটি বলা আছে। একটি পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে উপকরণ ও সংযোজন সহগে আলাদাভাবে উল্লেখ থাকে। বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া লাভ ও দুয়েকটি সংযোজনের খাত (যেমন: বিজ্ঞাপন ইত্যাদি) ব্যতীত মূল্য সংযোজন সবসময়ই একই থাকে।
কিন্তু উপকরণ মূল্য দেশীয় বা আন্তর্জাতিক নানা কারনে পরিবর্তিত হতে পারে। মূল্য বাড়তে পারে কিংবা কমতে পারে। তাই একজন করদাতা কর্তৃক যে সহগ ঘোষণা করা হয়েছে সে সহগে ঘোষিত উপকরণের মোট মূল্য ৭.৫% পর্যন্ত বাড়লে নতুন সহগ ঘোষণা ব্যতীত অতিরিক্ত ৭.৫% মূল্যের উপর পরিশোধিত মূসক রেয়াত পাবেন। কিন্তু এর বেশী বাড়লে বা ৭.৫% এর বেশী কমলে সহগে ঘোষিত মূল্যের ৭.৫% পর্যন্ত বর্ধিত উপকরণ মূল্য রেয়াত পাওয়া যাবে। অতিরিক্ত বর্ধিত অংশের উপর রেয়াত পাওয়া যাবে না। যেহেতু আইনে “অতিরিক্ত বর্ধিত উপকরণ কর” শব্দগুলো উল্লেখ আছে সেহেতু সহগ ঘোষণা ব্যতীত ৭.৫% এর অতিরিক্ত বর্ধিত উপকরণ কর রেয়াত নেয়া যাবে না। কিন্তু কমে যাওয়ার ক্ষেত্রে যেহেতু কম মূল্যের উপরই মূসক পরিশোধ করা হয় তাই পরিশোধিত উপকরণ করের সমপরিমাণ রেয়াত প্রাপ্য হবে।

(ণ) উপকরণ মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে পণ্য বা সেবা সরবরাহ করা হইলে।
(আইনে উপকরণ মূল্যের সংজ্ঞা নেই। তবে আইনের ধারা-২ এর দফা (১৯) তে উপকরণ কর এর সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে। উপকরণ মূল্য, পণ্য বা সেবার সরবরাহ পর্যায়ের মূল্যের চেয়ে কম হলে (অর্থাৎ, নেগেটিভ ভ্যালু এডিশন হলে), সেক্ষেত্রে পরিশোধিত উপকরণ কর রেয়াতযোগ্য হবে না। যেমনঃ কোন একটি পণ্যের উপকরণ মূল্য ১২০ টাকা এবং এর উপর পরিশোধিত মূসক ১৫.৬৫ টাকা। এ উপকরণ দিয়ে উৎপাদিত পণ্য ১০০ টাকা বিক্রয় করলে এবং ১৩.০৪ টাকা মূসক পরিশোধ করলে রেয়াত প্রাপ্য হবে না।
এ সংশোধনী আনয়নের ফলে ন্যায্য বাজার মূল্যের ধারনা কিছুটা হলেও সংকুচিত হয়েছে। একই সাথে ধারা-৪০, বিধি-২০, বিধি-২৮, বিধি-৩০, বিধি-৩৩ ইত্যাদি বিধি-বিধানের ক্ষেত্রও সংকুচিত করেছে।)

(২) কোন অর্জন বা আমদানির বিপরীতে পরিশোধিত উপকরণ কর রেয়াত গ্রহণ করা যাইবে না, যদি-

(ক) উক্ত অর্জন বা আমদানি যাত্রী যানবাহন সংক্রান্ত হয় বা উহার খুচরা যন্ত্রাংশ বা উক্ত যানবাহনের মেরামত বা রক্ষণাবেক্ষণ সেবার উদ্দেশ্যে করা হয়,
[আইনের ধারা-৪০ এর উপ-ধারা (১) তে এ বিষয়টি উল্লেখ আছে। যেমন: কোন ব্যক্তি গাড়ি ক্রয় করে নিজে কিংবা পরিবার-পরিজনের ব্যবহারের জন্য ব্যবহার করা হলে তা চূড়ান্ত ভোগ বলে গণ্য হয় এবং সেক্ষেত্রে রেয়াত প্রাপ্য হবে না। আবার অবাণিজ্যিক যাত্রীর ব্যবহারের জন্য অর্থাৎ কোন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিবহনের উদ্দেশ্যে কোন যানবাহন ব্যবহার করা হলে তা অবাণিজ্যিক যাত্রী পরিবহন হিসেবে বিবেচিত হবে। এ সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে পরিবহনে যে পরিবহন ব্যবহৃত হয় তার ব্যয় ঐ প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক খরচের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকে। কিন্তু এ সেবার বিনিময়ে পণ প্রাপ্য হয় না বিধায় এক্ষেত্রেও রেয়াত গ্রহণের সুযোগ নেই।)
তবে, যানবাহনের ব্যবসা করা, ভাড়া খাটানো বা পরিবহন সেবা প্রদান উক্ত ব্যক্তির অর্থনৈতিক কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত হইলে এবং যানবাহনটি উক্ত উদ্দেশ্যে অর্জিত হইলে উপকরণ কর রেয়াত গ্রহণ করা যাইবে:
(সাধারণ যাত্রীদেরকে অর্থের বিনিময়ে এ সেবা প্রদানের লক্ষ্যে যানবাহনের ব্যবসা করা, ভাড়া খাটানো বা পরিবহন সেবা প্রদান করলে তা রেয়াতযোগ্য হবে। যেমন: বাণিজ্যিক ভিত্তিতে যেসব যাত্রী যানবাহন ব্যবহৃত হয় অর্থাৎ যানবাহনের ব্যবসা করা, ভাড়া খাটানো বা পরিবহন সেবা প্রদান ইত্যাদি সেবা প্রদান করা হয় তবে সেবার বিপরীতে পণ আদায় করা হয় বিধায় শুধুমাত্র এ ধরনের কাজে ব্যবহার্য যাত্রী যানবাহনের উপর পরিশোধিত উপকরণ কর রেয়াতযোগ্য।)

(খ) উক্ত অর্জন বা আমদানি চিত্তবিনোদন সংক্রান্ত বা চিত্তবিনোদনের নিমিত্ত ব্যবহৃত হয়।
তবে, বিনোদন প্রদান উক্ত ব্যক্তির অর্থনৈতিক কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট হইলে এবং বিনোদনটি অর্থনৈতিক কার্যক্রমের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় প্রদান করা হইলে উপকরণ কর রেয়াত গ্রহণ করা যাইবে:
(অর্থনৈতিক কার্যক্রম প্রক্রিয়ায় পণের বিনিময়ে চিত্তবিনোদন বা চিত্তবিনোদনের নিমিত্ত আমদানিকৃত বা অর্জিত পণ্যের উপর পরিশোধিত মূসক রেয়াতযোগ্য। অবাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত কার্যক্রম পণবিহীন হয় বিধায়, তা রেয়াতযোগ্য নয়।)

(গ) উক্ত অর্জন ক্রীড়া বিষয়ক, সামাজিক বা বিনোদনমূলক ক্লাব, সংঘ বা সমিতিতে কোন ব্যক্তির সদস্যপদ বা প্রবেশাধিকার সম্পর্কিত হয়:
(ক্রীড়া বিষয়ক সেবা, সামাজিক বা বিনোদনমূলক ক্লাব, সংঘ বা সমিতিতে সদস্য পদ বা প্রবেশাধিকার সংক্রান্ত সেবা চূড়ান্তভাবে ব্যক্তিগত ভোগে ব্যবহৃত হয়। অন্যকোন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে তা ব্যবহৃত হয় না। সেহেতু এ সকল ক্ষেত্রে রেয়াত গ্রহণের সুযোগ নেই।)

(ঘ) উক্ত অর্জন পণ্য পরিবহন সেবা সংক্রান্ত ব্যয়ের ৮০ (আশি) শতাংশের অধিক হয়।। (পরিবহন সেবার বিপরীতে পরিশোধিত মূসকের ৮০ শতাংশ রেয়াতযোগ্য হবে।)

(৩) নিবন্ধিত ব্যক্তিকে দাখিলপত্র পেশকালে উপকরণ কর রেয়াত দাবির সমর্থনে নিম্নবর্ণিত দলিলাদি দখলে রাখিতে হইবে, যথা:-

(ক) আমদানির ক্ষেত্রে, আমদানিকারকের নাম, ঠিকানা এবং ব্যবসা সনাক্তকরণ নম্বর সম্বলিত বিল অব এন্ট্রি (Bill of Entry):

(খ) সরবরাহের ক্ষেত্রে, সরবরাহকারী কর্তৃক ইস্যুকৃত কর চালানপত্র;

(গ) বিলুপ্ত)

(ঘ) ধারা ২০ এর উপ-ধারা (২) এর ক্ষেত্রে কর পরিশোধের স্বপক্ষে ট্রেজারি চালান।

(আমদানিকৃত সেবার নিবন্ধিত গ্রহীতা আমদানিকৃত সেবার মূল্য দাখিলপত্রের প্রদেয় এর ছকে এবং উপকরণ কর রেয়াতের ছকে প্রদর্শন করলে একে অপরকে বাতিল করবে। এতে পরিশোধিত মূসক হিসাবে আসবে এবং করদাতার লেনদেনের স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠিত হবে। এক্ষেত্রে করদাতার নিকট অবশ্যই প্রদর্শিত করের সপক্ষে ট্রেজারি চালান থাকতে হবে। কিন্তু আমদানিকৃত সেবা রেয়াতযোগ্য না হওয়ায় রেয়াত দাবির সমর্থনে ট্রেজারি চালান দখলে রাখার বাধ্যবাধকতা আরোপের সুযোগ নেই।)

(ঙ) গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ, ব্যাংক, বীমা, বন্দর) ও টেলিফোন সেবার উপর পরিশোধিত মূসক রেয়াত গ্রহণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ইস্যুকৃত বিল, যাহা চালানপত্র হিসাবে গণ্য হইবে;

(চ) গ্রাহক কর্তৃক পরিশোধিত বিদ্যুৎ বিলের বিপরীতে ব্যাংক, মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান এবং ডিজিটাল পেমেন্ট গেটওয়ে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ইস্যুকৃত ইনভয়েস, যাহা নির্ধারিত শর্ত ও পদ্ধতিতে, চালানপত্র হিসেবে গণ্য হইবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top