ইজমা (Ijma) এর সংজ্ঞা:
ইজমা (Ijma) ইসলামিক জুরিসপ্রুডেন্স বা ফিকাহ-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। এটি ইসলামের শাস্ত্রীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার অংশ এবং মুসলিম সমাজে নতুন কোন ধর্মীয় বিধান বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় উলামাদের ঐক্যমত্য বা সম্মতির ভিত্তিতে গৃহীত হয়।
ইজমা (Ijma) এর সংজ্ঞা:
ইজমা হলো এমন একটি সিদ্ধান্ত বা মতামত, যা ইসলামী উলামা বা পণ্ডিতদের সম্মতিতে একত্রিত হয়, যখন কোনো বিষয় কুরআন বা হাদীসে স্পষ্টভাবে নির্ধারিত না থাকে। ইজমা মূলত পণ্ডিতদের ঐক্যমত্যকে বোঝায়, যারা কুরআন, হাদীস এবং কিয়াসের ভিত্তিতে একত্রিত হন এবং একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে তাদের মতামত প্রকাশ করেন।
অর্থাৎ, কোনো নতুন পরিস্থিতি বা নতুন সমস্যা যখন ইসলামী শাস্ত্রের মূল উৎস, অর্থাৎ কুরআন বা হাদীসে খোলাসা করা হয়নি, তখন ইসলামি শিক্ষার পণ্ডিতগণ সেই বিষয়ে একত্রিতভাবে একটি মতামত বা ফতোয়া প্রদান করেন। এই ঐক্যমত্যকে “ইজমা” বলা হয়।
ইজমার বৈশিষ্ট্য:
ঐক্যমত্য (Unanimity):
ইজমা তখনই গ্রহণযোগ্য হবে, যখন সমস্ত উলামা বা ঐক্যমত্য গৃহীত হবে। এক বা দুজনের ভিন্ন মতামত থাকলে তা ইজমা হিসেবে গণ্য হয় না।
পরবর্তী যুগে শর্ত (Subsequent Era Condition):
ইজমা কোনো সময়ের জন্য প্রযোজ্য হতে পারে, বিশেষত প্রথম শতাব্দীতে, যখন ইসলামের মূল সূত্র বা তাত্ত্বিক শাস্ত্রসমূহ পর্যাপ্ত পরিমাণে পরিপূর্ণ ছিল না। আজকের যুগে ইজমা গ্রহণের বিষয়টি বিভিন্ন দেশের উলামাদের ঐক্যমতের ওপর নির্ভর করে।
ইজমার উৎস:
ইজমা হলো মূলত উলামাদের ঐক্যমত্য, এবং তাদের সিদ্ধান্ত কুরআন ও হাদীসের আলোকে হতে হবে। উদাহরণস্বরূপ:
কুরআন: কুরআন হলো ইসলামের সর্বোচ্চ আইন এবং এর নির্দেশনা ছাড়াই কোনো ধর্মীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্ভব নয়।
হাদীস: নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর বাণী ও কাজের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন বিষয় স্পষ্ট করা হয়।
কিয়াস (Qiyas): যখন কুরআন ও হাদীসে কোনো নির্দিষ্ট নির্দেশনা পাওয়া যায় না, তখন পূর্ববর্তী উদাহরণ বা যুক্তি দিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ইজমার গুরুত্ব:
ইসলামের বিকাশ: ইজমা ইসলামি আইন ও ব্যবস্থার আধুনিকীকরণে সহায়ক। এতে নতুন সমস্যার সমাধান প্রদান করা হয়, যা কুরআন বা হাদীসে স্পষ্টভাবে উল্লেখিত না থাকে।
সামাজিক ঐক্য: ইজমা সমাজে ঐক্য সৃষ্টি করে এবং একত্রিতভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে।
ধর্মীয় কর্তৃত্ব: ইজমা ইসলামী উলামাদের জন্য একটি উচ্চতর ধর্মীয় কর্তৃত্ব গঠন করে, যা ইসলামি সমাজে শাসক হিসেবে কাজ করে।
উদাহরণ:
ইসলামি ইতিহাসে একাধিক পরিস্থিতিতে ইজমার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেমন:
উম্মার প্রথম শাসনকাল (খলিফা উমর ইবনে খত্তাবের শাসনকাল): উমর ইবনে খত্তাব (রা.)-এর শাসনকালে একটি নতুন আইন তৈরি হয়েছিল যে, “হজরত উমরের মৃত্যুর পরে, উম্মাহের পরবর্তী খলিফা নির্বাচন হবে”। এটি একটি ইজমা ছিল, যা মুসলিম উলামাদের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত হয়েছিল।
ইজমার গুরুত্ব:
ইজমা ইসলামী সমাজে অগ্রগতির এবং নতুন পরিস্থিতিতে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের একটি পদ্ধতি সরবরাহ করে।
ইসলামী আইন এবং সমাজের নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হলে ইজমা ব্যবহার করা হয় এবং উলামারা ঐক্যমত্যে পৌঁছে কোনো সিদ্ধান্তে আসেন।
ইজমা হলো একটি ঐক্যমত্য বা সম্মতি, যা মুসলিম উলামারা কোনো নতুন বিষয় বা সমস্যা নিয়ে কুরআন, হাদীস এবং ইসলামী বিধি-নীতি অনুসরণ করে পৌঁছান। এটি ইসলামী আইন প্রণয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে নতুন বা অজানা সমস্যা সমাধান করা হয়।